ঢাকা রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫ | ১১ কার্তিক ১৪৩২

বর্ষার সঙ্গে জোবায়েদ ও মাহীরের প্রেমের কথা বর্ষার পরিবারের সবাই জানত এবং মেয়ের মা মাহীরকে পছন্দ করত না। এ ছাড়া জোবায়েদকে কোনো প্রফেশনাল কিলার খুন করেনি। মাহীর নিজেই খুন করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্র।

বুধবার (২২ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদদীন জোবায়েদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন রাখে। তার প্রশ্নের জবাবে সংশ্লিষ্ট সূত্রটি এ সব উত্তর দেন।

সূত্র জানায়, অনেকেই অনেক রকম প্রশ্ন করছে। অনেক নানানিধ কথা বলছে। কিন্তু প্রেমের সম্পর্ক থেকেই হত্যার ঘটনাটা ঘটে।

এদিন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদদীন জোবায়েদের খুনের বিষয়ে কোনো প্রফেশনাল কিলার খুন করেছে কি না প্রশ্ন তোলেন। তবে সূত্র জানায়, জোবায়েদকে কোনো প্রফেশনাল কিলার হত্যা করেনি। মাহীর রহমান নিজেই হত্যা করেছে। পৃথক জায়গা থেকে দুইটা ছুরি কিনলেও একটি ছুরি দিয়েই মারা হয় জোবায়েদকে। অন্য ছুরিটি ব্যবহার হয়নি। মাহীরের বন্ধু আইলানকে পেছন থেকে ছুরি মারার কথা থাকলেও সে মারেনি। কিন্তু মাহীর ছুরি মেরে চলে আসার সময় মাহীর আইলানকে ছুরি ওঠাতে বলে। আমরা একটাই ছুরি উদ্ধার করি স্পট থেকে। ছুরি দিয়ে একটা আঘাতেই তাকে হত্যা করা হয়। ফলে একাধিক জখম বা একাধিক আঘাত করা লাগেনি। এটির নির্ভরযোগ্য তথ্য হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন পোস্টমর্টেমের সঙ্গে যুক্ত থাকা ডাক্তারের উক্তি।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিশ্চিত করে পোস্টমর্টেম শেষে ডাক্তার জানায়, গলার রক্তনালিতে আঘাত করা হয় জোবায়েদের। রক্তনালি কেটে যাওয়ায় খুবই স্বল্প সময়ে রক্তক্ষরণের মাধ্যমে তার মৃত্যু হয়। তিনি আরও জানান, এসব কথা আদালতে আসামিরা জবানবন্দিতেও স্বীকার করেছে।

এ সময় তদন্তের বিশারদে বর্ষার বাবা-মা, পরিবার বা ওই বাসার সব সদস্যের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কি না জিজ্ঞেস করলে সূত্র জানায়, আমরা গতকালের আগে কথা বলেছিলাম; কিন্তু আজ আর কোনো কথা বলা যায়নি। আজ বাসায় কেউ ছিল না। এজন্য কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তদন্তের জন্য আমরা আবার কথা বলব। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এসেছে কি না জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, এখনই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসেনি। এটি আসতে সময় লাগে। নতুন আর কোনো তথ্য আছে কি না জিজ্ঞাসা করলে তিনি আরও জানান, আমরা কয়েকটি টিম তদন্ত করছি। তদন্তের স্বার্থে অনেক পাওয়া তথ্যও গোপন করতে হচ্ছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা মো. জোবায়েদ হোসেন হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশ ‘ত্রিভুজ প্রেমের গল্প’ সাজিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদদীন।

তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সংবাদ সম্মেলন থেকে ‘ত্রিভুজ প্রেমের একটা গল্প’ সাজানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জোবায়েদের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, প্রক্টর, বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীর পাশাপাশি জোবায়েদের আইনজীবী মো. ইশতিয়াক হোসেনও ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে গত মঙ্গলবারের ডিএমপির বক্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রইছ উদদীন বলেন, ‘আমাদের কিছু কিছু বিষয় নিয়ে সংশয় আছে, প্রশ্ন আছে। জোবায়েদকে হত্যার আগে তার ছাত্রী বর্ষা তাকে কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করে, সে কখন আসতেছে, কতটুকু এসেছে এবং তার আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়, পরে তার লোকেশন চেক করে। বিষয়টা স্বীকারোক্তি দিয়েছিল ছাত্রী বর্ষা। সেটি এজাহারের প্রথম সূত্র হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটি কেন বাদ দেওয়া হলো? সেটা কি ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে, নাকি পরে বাদ দেওয়া হয়েছে, সেটা আমাদের প্রথম প্রশ্ন।’

অভিযোগ করে ওই শিক্ষক বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজে দুজন ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছে। একজন কালো টি-শার্ট পরিহিত, আরেকজনের পরনে ছিল লাল টি-শার্ট। এ দুজনই কি গ্রেপ্তার হওয়া দুজন কি না, আমরা কীভাবে নিশ্চিত হবো? সংশ্লিষ্ট প্রশাসন পর্যাপ্ত প্রমাণ জব্দ করেছে কি না, সেটা আমরা জানতে চাই।’

পুলিশের বিবরণের আরেকটি অংশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই অধ্যাপক বলেন, ‘ডিএমপি যে বিবৃতি দিয়েছে, হত্যার সময় সেখানে ধস্তাধস্তি হয়েছে। সাধারণত আমরা দেখি, ধস্তাধস্তির সময় আশপাশে অনেকে জড়ো হয়। তাহলে ওই বাসায় যে ধ্বস্তাধস্তি হয়েছে, তা কি কেউ কোনো শব্দ শোনেনি? তারা কেন বাঁচাতে এলো না?’

মামলার এজাহারের বিষয়ে অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন শেষে বাদী পক্ষের আইনজীবী ইশতিয়াক জিপু বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর বর্ষা জোবায়েদের এক বন্ধুকে বলেছে, কে বা কারা জোবায়েদকে মেরে ফেলেছে। এটা সূচনা বক্তব্য। কিন্তু এসব কিছুই উল্লেখ করেনি পুলিশ। এ ছাড়া এই মামলায় ৪-৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, খুব দ্রুত অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে। এই প্রত্যাশা পুলিশের কাছে।

এদিকে জোবায়েদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে নিজ বিভাগ (পরিসংখ্যান) বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ভাস্কর্য চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

এ সময় পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রিপন রউফসহ বিভাগের অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত রোববার জোবায়েদ হোসেন পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় ১৫, নূরবক্স লেনে রওশান ভিলা নামের বাসায় বর্ষা নামের এক ছাত্রীকে প্রতিদিনের মতোই পড়াতে যান। গত এক বছর ধরে তিনি ওই ছাত্রীকে পড়াতেন। এদিন আনুমানিক বিকেল ৪ টার ৪৫ মিনিটের দিকে ছাত্রীর বাসার তিনতলায় ওঠার সিঁড়িতে খুন হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *