ঢাকা শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫ | ১০ কার্তিক ১৪৩২

জালিয়াতির দায়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এলআর গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রিয়াজকে আজীবনের জন্য পুঁজিবাজার কার্যক্রমে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত ২১ অক্টোবর চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিএসইসির কমিশন সভায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিএসইসির সাবেক কোনো চেয়ারম্যানকে নিষিদ্ধ করার মতো ঘটনা প্রথমবারের মতো ঘটল। শিগগিরই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আদেশ জারি করবে বিএসইসি।
এর আগে গত জুলাই মাসে বিএসইসির বর্তমান কমিশন সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম, ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও তার ছেলে শায়ান ফজলুর রহমানকে আজীবনের জন্য পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। তবে অবাঞ্ছিত ঘোষণার বিষয়ে বিএসইসির আইনি এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

তবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম আমার দেশকে বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ এর ২০ ধারা অনুযায়ী কমিশন যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই যার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে তাকে ব্যক্তিগত শুনানির সুযোগ দেওয়ার বিধান রয়েছে বলে জানান তিনি। শিবলী রুবাইয়াতকে শুনানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে বিএসইসির এ কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু আইনি বিধান রয়েছে সেহেতু তাকে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

বর্তমানে শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আটক রয়েছেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডির একটি বাড়ি থেকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকে দুদকের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার করে।

বিএসইসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যানকে শুনানির জন্য তিন দফা চিঠি দেওয়া হয়েছিল। আইন ও বিধি মেনে সেটা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি শুনানিতে অংশ নেননি। কারাগারে থাকার কারণে একজন আইনজীবীর মাধ্যমেও শুনানিতে অংশ নিতে পারতেন তিনি কিন্তু সেটাও করেননি।

জানা গেছে, এলআর গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী রিয়াজ ইসলামও ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নেননি। এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট রয়েছে এমন কারণ দেখিয়ে শুনানিতে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকেন তিনি।

এদিকে আজীবন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কমিশন সভার সিদ্ধান্ত খুব দ্রুত আদেশ আকারে জারি করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। মূলত ওই আদেশ জারির পর থেকেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।

বিএসইসির পরিচালক আবুল কালাম এ বিষয়ে বলেন, নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণে নিষিদ্ধ থাকবেন সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। তিনি পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানে যুক্ত থাকতে পারবেন না। তবে ব্যক্তিগতভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে কোনো ধরনের আইনি বাধা থাকবে না।

অবশ্য এলআর গ্লোবালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ৩০ দিনের মধ্যে ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে পদ্মা প্রিন্টার্স ও কালার লিমিটেড এবং পরবর্তী সময়ে নাম পরিবর্তন করে গঠিত কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেডে বিনিয়োগ করা অর্থ সুদসহ ৩০ দিনের মধ্যে ফান্ডে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে বিএসইসির কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আদেশ জারির পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্থ ফেরত নিতে ব্যর্থ হলে রিয়াজ ইসলামকে ৯৮ কোটি টাকা জরিমানা গুনতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *